Ads

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ

ডায়াবেটিস আমাদের অতি পরিচিত একটি রোগ এবং আমরা কমবেশি সকলেই জানি এই রোগ আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি হুমকিস্বরূপ। ডায়াবেটিস মূলত রক্তের অনিয়ন্ত্রিত সুগার লেভেলকে বলা  হয়ে থাকে। বিশ্বে প্রতি ১১ জনের একজনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ডায়াবেটিস হওয়ার মাত্রা কত বেশি। ডায়াবেটিস দুই ধরণের হয়ে থাকে এগুলো হলো টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস। আজকে আমরা জানবো টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ, কারণ ও কিভাবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস  প্রতিরোধ করা যায় এই সম্পর্কে। 

টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর লক্ষণসমূহঃ 

•তৃষ্ণাবোধ হওয়াঃ টাইপ২ এর একটি লক্ষণ হচ্ছে যতই পানি পান করুন না কেন আপনার তৃষ্ণাবোধ মিটবে না। এর জন্য শরীরের গ্লুকোজ ভারসাম্যহীনতা দায়ী। 

•ঘন ঘন প্রস্রাবঃ এই রোগের রোগীদের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে ঘন ঘন প্রস্রাব হবে। অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীরে জমার কারনে এমনটি হয়ে থাকে। 

•দুর্বলতা এবং বিভ্রান্তিঃ টাইপ ২ আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে দুর্বলতা আসে এবং অনেক সময় মস্তিষ্কেও বিরুপ প্রভাব ফেলে যার কারনে বিভ্রান্ত হতে দেখা যায়। চিন্তাভাবনা অচলাবস্থা দেখা যায়। 

•হাত-পায়ের অসাড়তাঃ রোগীদের হাত-পায়ে অসাড়তা আসে। নার্ভ ড্যামেজ এর কারনে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। এটি হুট করে হয়, ধীরে ধীরে এই সমস্যাটি তৈরি হয়। 

•চোখ জ্বালাপোড়াঃ রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলে চোখে জ্বালাপোড়া হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে সমস্যা হয় রোগীর। 

•ত্বকের সমস্যাঃ এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ডার্ক স্কিন দেখা দিতে পারে। ত্বকে র‍্যাশ ধরণের কিছু দেখা যায় এবং উঁচু নিচু হয়ে থাকে ত্বক। 

•ওজন হ্রাসঃ স্থুলতা কিংবা বেশি চর্বি জাতীয় খাবার এর কারনে এই রোগ হলেও দেখা যায় ডায়াবেটিস হওয়ার পরে ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে থাকে। ইনসুলিনের ভারসাম্যহীনতা এর জন্যে দায়ী। 

•সংক্রমণঃ এই রোগের রোগীদের কোনো রোগ হলে তা ঘন ঘন সংক্রমণ হতে দেখা যায়। ঠিক হয়ে গেলেও এই রোগ আবার ফিরে আসে এমনটি দেখা যায়। যেমন নারীর ঘন ঘন ব্লাডার বা ভ্যাজাইনাআল ইনফেকশন এন্টিবায়োটিকে সেরে গেলেও তা আবার ফিরে আসতে পারে।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস কী? 

টাইপ২ ডায়াবেটিস কে মনে করা হয় অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারার জন্য অর্থাৎ স্থুলতার জন্য শরীরের চর্বির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারনে ইনসুলিন হরমোনের কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্থ হলে এই ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এর ফলে শরীরের গ্লুকোজ এনার্জিতে রুপান্তরিত হতে পারে না। এরপর শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে। একে বলা হয় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। টাইপ২ ডায়াবেটিসের কারনে একজন মানুষের আয়ুষ্কাল ১০ বছর কমে যেতে পারে। সাধারণত ৯০% মানুষের এই টাইপ২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে এবং পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মাঝেই হয়ে থাকে এই ডায়াবেটিস। তাই এর আরেক নাম- এডাল্ট অনসেট ডায়াবেটিস। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো টাইপ১ হলো একদম শৈশবকাল থেকে যে ডায়াবেটিস দেখা যায়। টাইপ১ বেশি ভয়াবহ এবং এদের শরীরে ইনসুলিন ইনজেকশন দিতে হয়। 

টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার কারণগুলোঃ 

•জীবনধারনের রীতিঃ মানুষের খাদ্যাভাস ও জীবন ধারনের রীতির জন্য এই রোগ দায়ী। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাওয়া, স্থুলতা হওয়া, পর্যাপ্ত শারীরিক কর্ম না করার কারনে এই রোগ হয়ে থাকে। চীন ও জাপানীদের মধ্যে ৩০% এবং ইউরোপীয় ও আফ্রিকানদের মধ্যে ৬০-৮০% মানুষের টাইপ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জীবনধারনের রীতি অনেক উল্লেখযোগ্য একটি কারণ। 

•জীনগত কারনঃ অসংখ্য জীন টাইপ২ ডায়াবেটিস হওয়ার জন্যে দায়ী। ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৬টির মতো জীন আবিষ্কার হয়েছে যা এই রোগ হওয়ার জন্যে দায়ী। অভিন্ন যমজের মধ্যে একজনের টাইপ২ ডায়াবেটিস থাকলে অপরজনের হওয়ার সম্ভাবনা ৯০% থাকে আর ভিন্ন হলে ৩০-৫০% সম্ভাবনা থাকে। 

টাইপ২ ডায়াবেটিস কীভাবে প্রতিরোধ করবো?

•অবশ্যই খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবার কমিয়ে আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। 

•কর্মক্ষম হতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। নিয়মিত জগিং এবং ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রন সহ জীবন ধারণ উন্নত রাখে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে জীবনধারণ পরিবর্তন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৮% কমিয়ে দেয়। 

•চিনিযুক্ত খাবার কম এবং শাকসবজি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। 

•শস্যদানা যেমন- গম, ভুট্টা, বার্লি এসব থেকে তৈরি খাবার যেমন, ব্রেড বা পাস্তা জাতীয় খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। 

•যাদের গ্লুকোজ সহনশীলতা কম তাদের খাদ্যাভাস পরিবর্তন, শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি মেটাফরমিন, একারবোস জাতীয় ওষুধ সেবন করলে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস খুব অহরহ হচ্ছে এবং আপনারা ইতোমধ্যেই জেনেছেন জীবনধারণে অসামাঞ্জস্য থাকলে টাইপ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আমাদের আগে থেকে সচেতন না হলে এই মহামারীর হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে না। 

টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকির কারণ

মধুমেহ রোগ কতিপয় ঝুঁকির কারন রয়েছে। যে সকল কারনে জীবনের কোন এক পর্যায়ে ডায়াবেটিস হতে পারে।

  • পরিবারের কারো ডায়াবেটিস থাকলে জীবনের কোন এক পর্যায়ে হতে পারে।
  • অস্বাস্থ্যকর ডায়েটের কারনে হতে পারে।
  • উচ্চতা অনুসারে যে পরিমান ওজন থাকার কথাত তার চেয়ে মাত্রা অতিরিক্ত ওজন থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে।
  • শারীরিক কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে এই টাইপের ডায়াবেটিস হতে পারে। অলস, বসে বসে সময় কাটালে  জীবনের কোন এক দশায় ডায়াবেটিস রোগে আক্তান্ত হয়।
  • উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এই ধরনের ডায়াবেটিস হতে পারে।
  • বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্যাংক্রিয়াসের যে পরিমান ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার কথা তার চেয়ে কম পরিমান নির্গত হয়। তখন ধীরে ধীরে শরীরে কোলাজেন উৎপাদন হ্রাস পায়। এভাবে বয়সের কোন এক পর্যায়ে ডায়াবেটিস হয়।
  • জাতিতত্ত্ব বা Ethnicity এর কারনে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
  • গর্ভবতী অবস্থায় শরীরে যথেষ্ঠ পরিমান পুষ্টি ও ভিটামিন জাতীয় খাদ্য গ্রহন না করা। ফলে শিশু তার মায়ের কাছ থেকে খাদ্য ও পুষ্টি শোষন করে নেয় ফলে মা তখন পুষ্টিহীনতায় ভুগবে। শিশুও পুষ্টি পাবে না। সেই শিশুর জীবনের কোন এক পর্যায়ে ডায়াবেটিস হতে পারে। এই অবস্থায় ডায়াবেটিস হলে তাকে জেস্টাশনাল ডায়াবেটিস (GDM) বলা হয়।
  • জীবনের কোন এক পর্যায়ে কঠোর পরিশ্রম করলে, পরবর্তি সময়ে অবসর গেলে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধতে পারে।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জন্য ওষুধ 

টাইপ-২ ডায়াবেটিস সৃষ্টির কারন প্রথমেই সঠিকভাবে নিরুপন করা সম্ভব নয়। শরীরে কোন প্রকার শক্তি না পেলে প্রথমেই তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে শারীরিক কার্যকলাপের প্রতি জোর দিতে বলেছেন International Diabetes Federation

Metformin: প্রথম শ্রেনীর চিকিৎসা হিসাবে Metformin ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ঔষধ ইনসুলিন প্রবেশের বাধা থাকলে সেটাকে উন্মুক্ত করতে সাহায্য করে থাকে। নিজের ভিতরে থেকে ইনসুলিনকে কাজে লাগিয়ে দেহ শক্তি পেয়ে থাকে। তাই মেটফরমিনকে প্রথম শ্রেনীর ঔষধ বলা হয় টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য।

Sulfonylureas: প্যাংক্রিয়াসের বিটা কোষ ইনসুলিন উৎপাদনে ব্যর্থ হলে এটাকে ৩য় চিকিৎসা পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। এই ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়কে বা প্যাংক্রিয়াসকে উত্তেজিত করে ইনসুলিন নিঃসৃত করতে সাহায্য করে। Sulfonylureas ড্রাগের মধ্যে gliclazide, glipizide, glimepiride, tolbutamide and glibenclamide ইত্যাদি নামে বাজারে পাওয়া যায়। তবে এই ধরনের চিকিৎসায় প্যাংক্রিয়াস যথেষ্ট পরিমান ইনসুলিন নির্গত করে। তবে এই ঔষধ ধীরে ধীরে বিটা সেলের কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে থাকে। তবে ঔষধের টাইট্রেশন করা দরকার এবং প্রতিনিয়ত রক্তে সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। যেকন সময়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।

ডায়াবেটিস চিকিৎসা নেয়ার আগে নিজেকে এই বিষয় ভালভাবে জানতে হবে। তবে সহজেই নিজেই এটাকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। নিজেকেই রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে যেকোন ওরাল ড্রাগ করবেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post